সায়ন ঘোষ, বনগাঁ : ভোটের দামামা বেজে গেছে। ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে চতুর্থ দফায় ভোট গ্রহণ। অন্যদিকে বনগাঁ লোকসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২০'ই মে। তাঁরই প্রচারে বনগাঁ অভিযান সংঘের মাঠে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন্দ্রীর প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের কেন্দ্র উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ লোকসভা। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে বনগাঁ তৃণমূলের দূর্গ ছিল। শান্তনু ঠাকুরের হাত ধরে তৃণমূলের দূর্গ বিজেপির গড় হয়ে উঠে। বিগত লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ব্যাপক হারের পর বনগাঁ পুনঃরুদ্ধারে মরিয়া তৃণমূল। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় বনগাঁকে। ঢেলে সাজানো হয়েছে জোড়াফুল সংগঠন। বিজেপির টিকিটে বিধায়ক হয়ে তৃণমূলে ফিরে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার দায়িত্ব পান বিশ্বজিৎ দাস। তাঁকেই এবার শান্তনুর প্রতিপক্ষ করেছে ঘাসফুল শিবির। আগামী ২০'ই মে নির্বাচন বনগাঁয়। ভোট যত এগিয়ে আসছে প্রচারে ঝড় তুলছে তৃণমূল। গতকাল বনগাঁ লোকসভার বাগদা বিধানসভার অন্তর্গত হেলেঞ্চায় জনসভা করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
অন্যদিকে, সেই সভার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বনগাঁ পৌর এলাকায় জনসভা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বনগাঁর অভিযান সংঘের মাঠে জনসভায় বক্তব্য রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মঞ্চ থেকে ‘মোদীবাবু যায়েগা’ বলে স্লোগান দিলেন। উল্টো দিকে বসে থাকা দর্শকাসন থেকে উত্তর এল ‘দিদি আয়েগা’। শুনে তিনি বলেন, ‘‘দিদি তো এখানে আপনাদের সঙ্গেই আছে। তবে দিদি দিল্লিতে বিরোধী জোট ইন্ডিয়াকে নিয়ে আসবে।’’
ভোটের ফলাফল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত যা হিসাব, তাতে ভোট খুব ভাল হয়েছে। আর সেটা বুঝে বাবুদের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। ওরা বুঝতে পেরেছে এ বার আর দিল্লিতে মোদীবাবু আসছেন না। আমার কাছে এ ব্যাপারে হিসাব আছে। এখনও পর্যন্ত যা ভোট হয়েছে তাতে বিজেপি ৪০০ তো দূর ২০০-ও পার করতে পারবে না।’’
দেশে মোট ৫৪৩টি লোকসভা আসন। তার মধ্যে এ বছর ৪০০ পার করার স্লোগান দিয়ে ভোটে নেমেছে বিজেপি। তাই নিয়েই কটাক্ষ মমতার। তিনি বলেন, ‘‘আজকের যে ভোট হচ্ছে, তার হিসাব এখনও আমি জানি না। তবে এ পর্যন্ত যা হয়েছে, তাতে বলে দিতে পারি বিজেপি বড়জোর ১৯৫ আসন পাবে। আর ‘ইন্ডিয়া’ গোটা দেশে পাবে ৩০০-৩১৫টি আসন।’’
মতুয়া প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মতুয়াদের প্রতি যদি মোদীর এত ভালবাসা, তবে তাঁদের নিঃশর্তে অধিকার দিচ্ছেন না কেন মোদী? ফর্ম ফিল আপ করতে বলছেন না কেন? এমনিই দিয়ে দিন। করবে না। আপনারা বরং এক কাজ করুন। এখানকার যে বিজেপি প্রার্থী তাঁকে বলুন আবেদন করতে, ফর্ম ফিল আপ করতে। দেখবেন করবে না। কেন করেনি? তার কারণ তিনি বিদেশি হয়ে যাবেন। কেউ করেনি। আসলে এটা একটা চক্রান্ত।’ তিনি আরো বলেন, ‘‘সিএএ করতে দেব না। আপনাদের সংরক্ষণ কেউ আটকাতে পারবে না। কিছু করতে হলে আমার জ্যান্ত লাশের উপর দিয়ে যেতে হবে মোদীকে।’’
বনগাঁর বিদায়ী বিজেপি সাংসদ এবং লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরকে নাম না করে আক্রমণ মমতার। বললেন, ‘‘এখানকার বিজেপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন, কী করেছেন?’’ দর্শকাসন থেকে সমস্বরে জবাব কিছু করেননি। শুনে মমতা বললেন, ‘‘না করেছে। আমরা ধরে ফেলেছি। নাগরিকত্ব দেব বলে কিছু কিছু জায়গায় টাকা তুলেছে।’’
সন্দেশখালি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সন্দেশখালির মা বোনেদের অসম্মান করার জন্য টাকা খরচ করছে, মদ দিচ্ছে, বোমা-গুলি-পিস্তল দিচ্ছে। যা ইচ্ছে করে যাচ্ছে। আমি ওদের বলি, একটা মা-বোনেদের সম্মান চলে গেলে সেই সম্মান ফিরবে না। মা-বোনেদের নিয়ে এই চক্রান্তের খেলা খেলবে না। নরেন্দ্র মোদী জেনে রাখুন, আমাদের এখানে মা বোনেদের গায়ে হাত দিতে গেলে সবাই ভয় পায়। হাত দিলে তাকে জেলে থাকতে হয়। এটা তোমাদের উত্তরপ্রদেশ নয়, মধ্যপ্রদেশ নয় যে, তফসিলিদের উপর অত্যাচারে ভারতে এক নম্বর। এটা বাংলা। এটা রবীন্দ্রনাথের বাংলা। এই বাংলায় অনেক মানুষ অনেক ধর্ম অনেক সম্প্রদায়।’’
এছাড়াও বৃহত্তম ল্যান্ড পোর্ট পেট্রাপোল প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বনগাঁয় সীমান্ত বাণিজ্য সংক্রান্ত ল্যান্ডপোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের অধীনে নিয়ে আসায় এবং রাজ্য সরকার তার ট্যাক্স নেওয়ায় বনগাঁ পুরসভার তরফে ল্যান্ডপোর্টের তরফে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েন। ফলে, বিশ্বজিৎ যদি জেতে তবে আমি, বিশ্বজিৎ, মমতাবালা সবাই একসঙ্গে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব। যাতে ওদিকটাও ঠিক থাকে। আর গরীব মানুষগুলোরও কর্মসংস্থান হয়।
সবশেষে বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘আমার নাম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন করছে। আর নাম পায়নি খুঁজে। সে তার মাকে বলছে, ‘চল মোদীকে ভোটটা দিয়ে আসি। আমার বাড়িতে জল দিয়েছে’। ঘেঁচু দিয়েছে। উনি জলটা দেননি। জলটা আমরা দিয়েছি। এই জলের ৭০ শতাংশ টাকা, জমি এবং রক্ষণাবেক্ষণ সব রাজ্য সরকার করে। মোদী বাবু কিচ্ছু করেনি।’’ একটু থেমে বললেন, ‘‘আপনারা নাকি বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ পান। মোদীবাবু বলছে। পাচ্ছেন নাকি? বিনা পয়সা গ্যাস পাচ্ছেন? এ হল গ্যাস বেলুনের থেকেও বড় বেলুন। ’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘বিজেপি কী বলে ভোট চাইছে? ১০ বছর আগে বলেছিল, ১৫ লাখ টাকা দেবে। পেয়েছেন? ২ কোটি লোককে চাকরি দেবে বলেছিল। পেয়েছেন? বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস পেয়েছেন? মোদী গ্যারান্টি ফোর টোয়েন্টি। বিনামূল্যে নাকি রেশন, জল দিচ্ছেন। পেয়েছেন? আমার নামটা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মনে আসে। কারণ, ভয় দেখালে আমি একমাত্র ভয় পাই না।’’