তড়িৎ বিজ্ঞানের জনক মাইকেল ফ্যারাডের জীবন

তড়ি বিজ্ঞানের জনক মাইকেল ফ্যারাডের জীবন

Life-of-Michael-Farad-father-of-electricity

অজয় মজুমদার

তড়ি বিজ্ঞানের ইতিহাসে যার অবদান অপরিসীম সেই বিজ্ঞানী নাম মাইকেল ফ্যারাডে(১৭৯১ থেকে ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি ছিলেন এক কামারের ছেলে। ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের ২২শে সেপ্টেম্বর তারিখে লন্ডনের কাছে এক গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। গরীব হলেও কামর তাঁর ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করেছিলেন৷ দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বালক মাইকেল বেশ ভালোই পড়াশোনা করছিলেন৷ কিন্তু এক নিষ্ঠুর মাস্টারমশায়ের দৈহিক নির্যাতন সহ্য করতে না পারায় মাইকেলের পড়াশোনা ছেদ পড়ল অসময়ে৷ স্কুলের গন্ডি তিনি আর পার করতে পারলেন না৷

মাত্র ১৩ বছর বয়সে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ফ্যারাডে ভবঘুরে ছেলের মত ঘুরে বেড়াতে লাগলেন৷ লন্ডনে তখন জর্জ রিবাউ নামে এক পুস্তক বিক্রেতা ছিলেন৷ তাঁর বই বাঁধানোর দোকান ছিল৷ ভবঘুরে ফ্যারাডে এই ভদ্রলোকের সুনজরে পড়ে গেলেন৷ জর্জ রিবাউ ফ্যারাডেকে বিনা পারিশ্রমিকে বই বাঁধানোর কৌশল শিখিয়ে দিলেন৷

জর্জ  রিবাউ-এর দোকানে বালক ফ্যারাডে বই বাঁধানোর কাজ করতে লাগলেনI বাঁধাই- এর জন্য যে সব  বই দোকানে আসতো, ফ্যারাডে সেগুলো যত্ন সহকারে পড়ে ফেলতে লাগলেন। বিদ্যু আর রসায়ন বিদ্যার বই পড়তে তাঁর খুব ভালো লাগতো।

দেখতে দেখতে বেশ কয়েক বছর কেটে গেল৷ ফ্যারাটে এখন আর বালকটি আর নন, বিশ বছরের যুবক৷ একদিন দোকানে বসে মন দিয়ে তিনি বিদ্যু সম্পর্কিত একটি বই পড়ছিলেন৷ হঠা সেখানে এক খরিদ্দার এলেন৷ তিনি ইংল্যান্ডের রয়েল সোসাইটির সভ্য৷ ফ্যারাডেকে মন দিয়ে বিজ্ঞানের বই পড়তে দেখে তিনি খুশি হলেন এবং তার নাম ধাম জেনে নিলেন৷ তারপর তাকে উপহার দিলেন চারখানি টিকিট৷ খ্যাতনামা বৈজ্ঞানিক 'ডেভিড' লন্ডনে চারদিন বক্তৃতা দেবেন৷ সেই বক্তৃতা শুনতে হলে টিকিট কাটতে হবে। খরিদ্দারের কাছ থেকে সেই টিকিটই উপহার পেলেন  ফ্যারাডে৷ চারদিন খুব মন দিয়ে ফ্যারাডে ডেভিডের বক্তৃতা শুনলেন৷ বক্তৃতার সারাংশ নিজের নোট বইতে সযত্নে লিখে রাখলেন।    

কিছুদিন পরেই ফ্যারাডের শিক্ষানবিশকাল শেষ হলো। তখন তিনি ভাবলেন-- বাকি জীবনটা বই বাঁধানোর কাজ করে কাটাবেন, না তার প্রিয় বিষয় তড়ি বিজ্ঞানের উপর গবেষণা করবেন। মন সায় দিলো শেষের টিকে৷ তাই ফ্যারাডে ডেভিডের অধীনে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে ডেভিডকে তিনি একখানি চিঠি লিখলেন৷ সেই চিঠির সঙ্গে ডেভিড বক্তৃতার সারাংশও সুন্দর হস্তাক্ষরে  লিখে পাঠালেন৷ এতে কাজ হলো৷ কিছুকাল পরে ডেভিড তাঁর গবেষণাগারে কাজ করার জন্য আহ্বান জানালেন৷ মাইনে-সপ্তাহে ২৫ শিলিং করে৷

প্রতিভা থাকলে তার স্কুরণ ঘটবেই৷ এক্ষেত্রেও তাই হল৷ সামান্য কাজ থেকে শুরু করে ফ্যারাডে একদিন ডেভিডের সহকারীর পদে উন্নিত হলেনI শেষে নিজেও স্বাধীনভাবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাতে লাগলেন। আবিষ্কার করতে লাগলেন চমকপ্রদ সব বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব৷ তখন ডেভিডকে একদিন বলতে শোনা গেল-- ফ্যারাডেই আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার৷

তড়ি প্রবাহের উপর চুম্বকের ক্রিয়ার ফল প্রত্যক্ষ করা যায়- সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করলেন মাইকেল ফ্যারাডে। ফ্যারাডে একটি কাচপাত্র নিলেন।  পত্রটিতে পারদ ভরলেন ৷একটি দন্ড চুম্বককে পারদপূর্ণ পাত্রের মাঝখানে খাড়াভাবে দাঁড় করালেন চুম্বক দণ্ডের এক প্রান্ত পাত্রের পারদের মধ্যে ডুবে রইলো৷ অপর প্রান্ত রইল পারদের উপর মাথা তুলে তড়ি প্রবাহের উপর চুম্বকের বিস্ময় কর প্রভাব প্রত্যক্ষ করে অবাক হলেন ফ্যারাডে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে তিনি তাঁর স্ত্রীকে ডেকে আনলেন ওই পরীক্ষাটি দেখতে

ফ্যারাডের বৈজ্ঞানিক প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ ১৮২৪ সালে তাকে ইংল্যান্ডের রয়েল সোসাইটির সভ্য মনোনীত করা হয়। তাছাড়া তাঁর নামকে  অমর করে রাখার জন্য ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ধারণ ক্ষমতার ব্যবহারিক এককের নাম রাখা হয় 'ফারাড '

Post a Comment

Previous Post Next Post