সায়ন ঘোষ, বনগাঁ : পৌরভোটে সবুজ ঝড় সারা রাজ্য জুড়ে। ১০৮ টি পুরসভার মধ্যে ১০৭ টি পৌরসভা তৃনমূলের দখলে। সুত্রে জানা গেছে, আগামী ৮'ই মার্চ মঙ্গলবার কলকাতার নজরুল মঞ্চ থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রত্যেকটি পৌরসভার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের নাম ঘোষণা করবেন।
অন্যদিকে, উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বনগাঁ পৌরসভার ২২ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৯ টি ওয়ার্ডে জয় লাভ করেছে তৃণমূল। কিন্তু এবার প্রশ্ন, বনগাঁ পৌরসভার চেয়ায়ম্যানের আসন কার দখলে যাবে? ২২ জনের মধ্যে কে এগিয়ে রয়েছে, বনগাঁর পৌরপ্রধানের দায়িত্ব পেতে?
সবুজ আবীর মেখে উচ্ছ্বাস বনগাঁয়, বিস্তারিত ভোটের ফলাফল
উল্লেখ্য, শেষ বারের চেয়ারম্যান পদ সামলেছেন তৃণমূল নেতা শংকর আঢ্য। বনগাঁতে উন্নয়নও হয়েছে একের পর এক। তারপর দলের নির্দেশে বনগাঁ পৌরসভার পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ। যদিও এবারের পৌর নির্বাচনে বনগাঁ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী গোপাল শেঠ। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ২১৬৭। তিনি জয়ী হয়েছেন ৮৪৯ ভোটে।
প্রসঙ্গত, বনগাঁ পুরসভার ২২ টি ওয়ার্ডের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ১১ জন মহিলা কাউন্সিলর। সেই মাফিক মহিলা জয়ী প্রার্থীকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিলে কে পাবে পৌরপ্রধানের দায়িত্ব?
উল্লেখ্য, মহিলা কাউন্সিলর ১১ জনের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কাউন্সিলর হলেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কৃষ্ণা রায়, এমনই মতামত রাজনৈতিক মহলের। কৃষ্ণা রায় ২৭ বছর ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি বনগাঁ পৌরসভার তিন বারের উপ পৌরপ্রধানের দায়িত্ব সামলেছেন। তাঁর কাজে গোটা বনগাঁ শহরের মানুষ তাঁকে চেনেন এক নামে। খুব কম মানুষই আছেন যারা কোনো রকম সুবিধে বা প্রয়োজন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাঁর কাছ থেকে, এমনটা হয়নি। এমনই বক্তব্য বনগাঁর ৯, ১০, ১১, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের।
অন্যদিকে রয়েছে জোৎস্না আঢ্য, রাজনৈতিক দিক থেকে তিনিও পিছিয়ে নেই। তিনি বনগাঁ পৌরসভার প্রাক্তন পৌরপ্রধান। বনগাঁ পৌরসভায় ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। তারপর ২০১৫ সাল থেকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছেন তাঁর স্বামী শংকর আঢ্য। তবে এবারের পৌরভোটে তাঁর স্বামী তথা তৃণমূল নেতা শংকর আঢ্যকে পৌরভোটের টিকিট দেওয়া হয়নি। সেই কারণে ভোটের আগে বিভিন্ন পথসভা থেকেই দলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে জোৎস্না আঢ্যকে। নিজের দলের সঙ্গে তাঁর বনিবনা ভালো না, এমনই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
বনগাঁ পেট্রাপোল সীমান্তে বন্ধ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য
অপরদিকে, ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দীপালী বিশ্বাস ১৮৩৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। রাজনৈতিক দিক থেকে তেমন একটা প্রভাব না থাকলেও, তিনি গত ৫ বছরের কাউন্সিলর পদ সামলেছেন বনগাঁ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে।
আবার, ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছেন বন্দনা দাস কির্তনীয়া। বনগাঁ পৌরসভায় এবারের সবচেয়ে বেশি ভোটে জয় যুক্ত হয়েছেন তিনি। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩৪৯৪ এবং জয়ী হয়েছেন ২৯৯২ ভোটে।
এছাড়াও, শম্পা মোহন্ত ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছেন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ২৪১৪ এবং জয়ী হয়েছেন ১৯১২ ভোটে। তিনি হলেন বনগাঁ পৌরসভার ১০ বছরের কাউন্সিলর। সেদিক থেকে চেয়ারম্যান পদ থেকে পিছিয়ে নেই তিনিও।
উল্লেখ্য, এবারের বনগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে যদি কোনো জয়ী পুরুষ প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, সে ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজয়ী প্রার্থী গোপাল শেঠ। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ২১৬৭ ও জয়ী হয়েছেন ৮৪৯ ভোটে। শুধুমাত্র এটিই নয়। তিনি প্রাক্তন বিধায়কের পদও সামলেছেন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বনগাঁর বিধায়কের দায়িত্ব সামলেছেন। তারপর তিনি বনগাঁ আর.টি.ও. বোর্ডের মেম্বার ছিলেন ১০ বছর।
অন্যদিকে, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী কাউন্সিলর হলেন দিলীপ কুমার দাস। রাজনৈতিক মহলে থেকে তাঁর পরিচয় অনেক বেশি। যদিও সম্প্রতি শারীরি অসুস্থ হলেও বনগাঁ শহর তৃণমূলের সভাপতিত্ব সামলাচ্ছেন তিনি।
এবার দেখার কার দখলে যাবে বনগাঁ পুরসভার পৌরপ্রধানের চেয়ার, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।