সার্বভৌম সমাচার পত্রিকা : রবিবার সকাল থেকেই চলল ভোটের নামে প্রহসন। একাধিক বুথ থেকে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলে বুথ ছাড়লেন পোলিং এজেন্টরা। প্রতিবাদ করায় প্রার্থীকে মারধোরের অভিযোগ তুলে বাটার মোড়ে পথ অবরোধ করলেন বিজেপি প্রার্থীসহ কর্মী সমর্থকেরা। ভোট পূর্ববর্তী হিংসার ঘটনার পর এদিন সকাল থেকেই থমথমে ছিল গোটা পৌর এলাকা।
আরও পড়ুন-- বুথ দখল করে ভোট লুট বনগাঁর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে, আক্রান্ত সাংবাদিক
রবিবার সকাল থেকেই একের পর এক ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ আসতে থাকে। বনগাঁ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী সীমা বিশ্বাসকে মারধোরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল প্রার্থী ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে। শাসক দলের কর্মীদের হাতে নিগৃহীত হওয়ার অভিযোগ তুলে বুথের বাইরে এসে কেঁদে ফেলেন সীমাদেবী। ওই একই অভিযোগ তুলে ধরেন বনগাঁ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী শিপ্রা বাইন সহ এজেন্টরা। এরপর তারা ভোট কেন্দ্র ছেড়ে এসে বনগাঁ থানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল।
অন্যদিকে বনগাঁ পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে সকাল থেকেই একের পর এক ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠে। সিপিএম প্রার্থী দিশারী মুখার্জী বলেন, “সকালে থেকে ভোট শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও কিছুক্ষণ পর থেকেই বহিরাগত আসতে শুরু করে। এরপর দফায় দফায় দুষ্কৃতীরা এসে বুথের সমস্ত দরজা বন্ধ করে ভয় দেখিয়ে পরপর ছাপ্পা ভোট দেয়। প্রথমে আমরা প্রতিবাদ করায় কিছুক্ষণ পর তারা সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।' অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল।
আরও পড়ুন-- বনগাঁয় ভোট লুঠের অভিযোগ তুলে রাস্তা অবরোধ সিপিআইএম কর্মীদের
এদিন দুপুর দেড়টা নাগাদ ছাপ্পা ভোটের খবর পেয়ে বনগাঁ হাই স্কুলে যায় সার্বভৌম সমাচার পত্রিকা। প্রকাশ্যে বুথ আটকে ছাপ্পা দেওয়ার খবর করতে গেলে আচমকা ১৫-২০ জনের এক দুষ্কৃতী দল পুলিশের সামনেই সাংবাদিকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাকে মারধোর করতে শুরু করে। নিগৃহীত সাংবাদিক কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। অথচ ঘটনাস্থলে নীরব দর্শকের ভুমিকায় হাতে হাত বেঁধে সমস্ত ঘটনাটা দেখতে থাকে বনগাঁর পুলিশ প্রশাসন। এমনকি ওই সময় পুলিশের সামনেই বনগাঁ হাই স্কুলের চারটি বুথই দখল করে নেয় বহিরাগত দুষ্কৃতীরা।
বনগাঁ পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের রিগিং, ছাপ্পা ভোট, বুথ দখল করার অভিযোগে শক্তিগড় স্কুলের ভোট কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসে বিজেপি প্রার্থী দিপ্তেন্দু বিকাশ বৈরাগীসহ বিজেপির এজেন্টরা। তারা বনগাঁ বাটার মোড়ে অবরোধ করে। তাদের অভিযোগ, ‘প্রার্থীদের মারধর করা হলো৷ চারটি বোম মারা হলো। পুলিশ অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দেখছে৷ তাহলে এমন ভোটের কি দরকার ছিল?’
আরও পড়ুন-- বনগাঁ পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে বোমাবাজির অভিযোগ, রাস্তা অবরোধ বিজেপির
বিকাল আড়াইটে নাগাদ বনগাঁ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী দেবযানী চাটার্জীকে শারীরিক হেনস্তার অভিযোগ আসে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর স্বামীর বিরুদ্ধে । নিগৃহীত কংগ্রেস প্রার্থী দেবযানী চাটার্জী বলেন, “আমাদের বাইরে বের করে দিয়ে বুথে তালা দিয়ে দেয়। আমাকে পুলিশ সহযোগিতা করেনি। আমি মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়কে বলব, আপনারা যদি এত উন্নয়ন করে থাকেন, তাহলে ছাপ্পা মারতে হয় কেন। আপনারা তো বিরোধী শুন্য বোর্ড চাইছেন, তাহলে বিরোধী শুন্য ভোট করুন। তাতে সাধারণ মানুষ নির্যাতিত হবে না”। অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল।
অন্যদিকে বেলা ৪টে নাগাদ ১ নম্বর ওয়ার্ডের হাই মাদ্রাসা স্কুলে ভোট লুট করতে এসে প্রতিরোধের মুখে পড়ে দুষ্কৃতীরা গুলি চালায় বলে অভিযোগ। অভিযোগের তির সেই শাসক দলের দিকে। জানা গিয়েছে, শতাধিক বহিরাগতরা এসে স্কুলের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করলে বিভিন্ন দলের স্থানীয় কর্মীরা তাদের আটকে দিলে দুষ্কৃতীরা শূন্যে আট থেকে দশ রাউণ্ড গুলি ছোড়ে। এরপর বহিরাগত দুষ্কৃতীরা রাস্তার উপর বাইক ফেলে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে ব্যাপক পুলিশ বাহিনী টহল দিচ্ছে পুলিশ। ওই ঘটনার পর এক মহিলাকে আটক করেছে পুলিশ।
বিফলে গেল শান্তিপূর্ণ ভোটের চেষ্টা! ১০৮ টি পুরসভায় দিকে দিকে অশান্তি
এদিন বিকেলে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে হাজারীলাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে একদল বহিরাগত ছাপ্পা দিতে আসে বলে অভিযোগ তোলে বিজেপি ও নির্দল প্রার্থীরা। অভিযোগ, ওই ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী চিরঞ্জিত বিশ্বাস ও বিজেপি কর্মীরা বহিরাগতদের ছাপ্পা দিতে বাধা দিলে মারধোর করে তারা। এমনকি তারা অভিযোগ করেন, বহিরাগতদের ওই বুথ থেকে বেরিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে এক পুলিশ কর্মী।
এরপর ভোটদান শেষে ইভিএম ও ভোট কর্মীদের স্কুল ঘরে গেটের তালা দিয়ে আটকে রাখে নির্দল ও বিজেপি কর্মীরা । দীর্ঘক্ষন আটকে থাকার পরে ঘটনাস্থলে যায় বনগাঁর এসডিপিও ও আইসির নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী। এসডিপিও নির্দল ও বিজেপি কর্মীদের আশ্বস্ত করলে ইভিএম ও ভোট কর্মীদের মুক্ত করে তারা।