পদ্মভূষণ প্রত্যাখ্যান বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের, ঐতিহাসিক ভুল দাবি একাংশের

Buddhadeb-Bhattacharyas-rejection-of-Padma-Bhushan

প্রতিনিধি : মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারের পদ্মভূষণ-এ সম্মানিতদের তালিকায় নাম উঠে এসেছে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পাচ্ছেন ৩৪ বছরের বাম শাসনের শেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তালিকায় নাম আসতেই হৈচৈ পরে যায় গোটা বাম সমর্থকদের মধ্যে।

বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার পাশাপাশি গত বছর করোনা ভাইরাসেও আক্রান্ত হন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব এবং তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য। হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয় উভয়কেই। কিন্তু আজকের পদ্মভূষণ-এ সম্মানিতদের তালিকা প্রকাশ পাওয়ার খবর পেয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জানান, যে পদ্মভূষণ পুরস্কার নিয়ে তিনি কিছুই জানেন না, এবং তাকে এই নিয়ে কেউ কিছু বলেনি। যদি তাকে পদ্মভূষণ পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করছেন বলেও জানিয়েছেন। 

উল্লেখ্য, স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত পরিবারের ছেলে বুদ্ধদেবের বামপন্থী রাজনীতিতে হাতেখড়ি ছাত্রজীবনে। ১৯৬৬ সালে সিপিএম-এর সঙ্গে যুক্ত হন। ডেমোক্র্যাটিক ইয়ুথ ফেডারেশনের সম্পাদকও ছিলেন। ১৯৭১ সালে সিপিএম-এর রাজ্য কমিটির সদস্যতা পান। ১৯৭৭ সালে প্রথম বার বিধায়ক নির্বাচিত হন। বাংলায় তখন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।  

বাম আমলের শেষ পর্যায়ে ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু ২০০৭ সালে জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে নন্দীগ্রামে গুলি চলা থেকেই বাংলায় বাম আমলের বিদায়ের ঘণ্টা বাজতে শুরু করে। নন্দীগ্রামে গুলি চালানোর ঘটনায় বুদ্ধদেবের সমালোচনা করেছিলেন জ্যোতি বসুও।  তবে সিঙ্গুর ছিল বাংলায় বাম আমলের সমাপ্তিতে শেষ পেরেক। ২০১১ সালে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে বাংলায় বাম শাসনের অবসান ঘটান তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

জ্যোতি বসুর প্রয়াণের পর বামপন্থীদের অভিভাবক হয়ে উঠেছিলেন বুদ্ধদেব। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে বাম শাসনের অবসানের সঙ্গে সঙ্গেই সক্রিয় রাজনীতি থেকে ক্রমশ আড়ালে চলে যেতে শুরু করেন তিনি। অসুস্থ শরীর নিয়ে ২০২০ সালে ব্রিগেডের লাল সমাবেশেও হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু একসময় এক সবুজ অক্সিজেন জোগাত তাঁকে, সেখানে গাড়ির বাইরে পা-ই রাখতে পারেননি তিনি। 

২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগেও ব্রিগেডে বামেদের সভায় যাওয়ার কথা ছিল বুদ্ধদেবের। কিন্তু অসুস্থতার জেরে পিছু হটতে হয় তাঁকে। ন্তু বাডি়তে থেকেও কমরেডদের মনোবল জুগিয়েছিলেন তিনি। লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, ব্রিগেডে লাল পতাকার জোয়ার, আর তিনি গৃহবন্দি। এই যন্ত্রণা কাউকে বলে বোঝাতে পারবেন না। ভোটের ময়দানে নন্দীগ্রাম ঘিরে যখন পারদ চড়ছে, তখনও  বাম আমলে জমি আন্দোলনপর্বে ষড়যন্ত্র নিয়ে সরব হন তিনি। তবে সক্রিয় রাজনীতিতে বুদ্ধদেব আজ অনুপস্থিত। ২০২১-এ ভোটও দিতে যেতে পারেননি।

যদিও পদ্মভূষণ প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে একাধিক সাধারণ মানুষ ঐতিহাসিক ভুল বলে দাবি করছেন। 

Post a Comment

Previous Post Next Post