শ্রমণ দে : সেই কবে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর”। আমরা সবসময় কি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে এই পন্থা মেনে চলি ? চলার চেষ্টাও বোধহয় সবসময় করি না। কিন্তু অনেকেই আবার প্রশ্ন তুলবে, শিবজ্ঞানে জীবসেবা করেও কতজন মানুষকেই বা সুখী রাখতে পারব আমরা ? যাইহোক, সমস্ত রকম বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে বনগাঁ কালুপুর অঞ্চলের ধর্মপুর গ্রামের শিশুদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় এনজিও “Bee”.
ভুবনেশ্বরে থাকে বনগাঁ হাই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র বিরূপাক্ষ। Kalinga Institute of Medical Sciences-এর ছাত্র ও বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তনী বিরূপাক্ষর মাথাতেই প্রথম আসে নিজের এলাকার দুঃস্থ শিশুদের নিয়ে কিছু করার। তার এই ভাবনা বাস্তবায়নের কাছে আসে যখন তার পাশে এসে দাঁড়ায় তারই স্কুলের বন্ধু শ্রমণ ও অভীক (Maulana Abul Kalam Azad University of Technology-তে পাঠরত), সায়ক ও অর্ঘ্যশেষ (West Bengal State University-তে পাঠরত), ভ্রাতৃপ্রতিম অনিকেত (National Institute of Technology, Durgapur-এ পাঠরত), সৌম্যজিৎ (Techno India Main, Salt Lake-তে পাঠরত) এবং অয়নাভ (বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র)। গতবছর থেকেই সকলের মিলিত প্রয়াস “Bee”-কে নিয়ে গেছে দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা মানুষগুলোর একদম কাছে।
বনগাঁয় প্রতিবন্ধীদের নিয়েই পালিত হল রক্তদান শিবির
গতকাল ছিল দুর্গাপঞ্চমীর শুভদিন। “Bee” বেরিয়ে গেল নিজ লক্ষ্যে। সকাল ঠিক পৌনে দশটা থেকে শুরু হল তাদের পঞ্চমীর শুভারম্ভ। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সমস্ত শিশু পেল পুজোর জন্য নতুন জামা এবং পড়াশোনার জন্য খাতা-পেনসিল। “Bee” দলের অভীক (অভীক সরকার) মনে করেন, “আমরা বাচ্চাদের মুখের এই হাসিটুকু দেখার জন্য সারা বছর অপেক্ষায় ছিলাম। হাসিটা দেখার পর যেন ওদের জন্য কিছু করার তাগিদ আরও বেড়ে যায়। অনেক চেনা-অচেনা মানুষ, বন্ধুবান্ধব আমাদের সাহায্য করেছেন– তাদের সাহায্য ছাড়া আমাদের পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব হত না”। দলের প্রত্যেক সদস্যের বাড়ি থেকেও এসেছে আর্থিক সহায়তা।
দলের সমস্ত সদস্য তাদের এই প্রয়াস নিয়ে খুবই আশাবাদী। সকলেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর অপেক্ষায় রয়েছেন 365 টা দিনের। যখন আবার তারা আর-পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই সকলের মধ্যে মিশে “মৌন মুনির মুখে ভাষা” ফুটিয়ে তুলবে।