বিশেষ রচনা
প্লাস্টিক হয়ে উঠেছিল সভ্যতার আশীর্বাদ- আজ তা সভ্যতার অভিশাপ
প্লাস্টিক পরিবেশ দূষণের অন্যতম উৎস ৷পৃথিবীর বড় বড় শহরের প্রত্যেক আবর্জনার স্তূপের মধ্যে প্লাস্টিকের পরিমাণই বেশি ৷ প্যাকেজিং টেকনোলজির হাত ধরেই প্লাস্টিক ব্যবহার বেড়েছে ৷ সারা দুনিয়াতেই প্লাস্টিক বিশেষ করে একবার ব্যবহৃত হয় এমন প্লাস্টিক পণ্য-- এক বিশাল সমস্যা । পরিবেশ সংগঠন গ্রিনপিস বলেছে ২০১৫ সালে পৃথিবীতে ৬৩০ কোটি টন প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়েছিল ৷ এর মাত্র ৯% রিসাইকেল পুনর্নবায়ন হয়েছে। বাকি সব প্লাস্টিক হয় পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে -- বা ফেলে দেয়া হয়েছে ৷ যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশকিছু উন্নত দেশ বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইক্লিং এর জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছে এশিয়ার কিছু দেশে ।
তালিবানের হাতে সাংবাদিকের পরিবারের সদস্য খুন, বিপদের সম্মুখীন আফগান সাংবাদিকরা
সব প্লাস্টিক কিন্তু রিসাইকল করা যায় না ৷এটা শতশত বছর টিকে থাকে ৷ এক ধরনের প্লাস্টিক আছে যাকে বলে পি ই টি বা পলি ইথাইলিন টেরেপথ্যালেট ৷ যা ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের পানীয়ের বোতল তৈরির জন্য ৷ এগুলি সহজে নষ্ট হয় না ৷
মিজ জেনকিনস নামে এক গবেষক অন্য এক বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে হঠাৎ একটি ছত্রাক আবিষ্কার করে ফেললেন। যে ছত্রাক প্লাস্টিক খায় ৷ এ বিষয়টি প্রথম জানান. বিবিসি-র প্রযুক্তিবিষয়ক রিপোর্টার এমা উলাকট ৷ মিজ জেনকিনস তার আবিস্কৃত ফাংগাসটি পি ই টি আর পলিইউরিথেনের উপর পরীক্ষা করে দেখেছেন।
মহামারীকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে উপচে ভিড় দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে!
তিনি দেখলেন বায়ুরোধী করার জন্য প্লাস্টিক স্পঞ্জ দেয়া ছিল৷ ফাংগাস গুলি সেটাকে ক্ষয় ধরিয়েছে৷ শুধু তাইই নয় অন্য যে কোন খাবারের মতই সেটাকে হজম করে ফেলেছে। জেনকিনসের এ প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল জৈব ভিত্তিক পদার্থকে ইনসুলেশন প্যানেল তৈরিতে কী ভাবে ব্যবহার করা যায় সেটা পরীক্ষা করা ৷ কিন্তু প্লাস্টিক খেকো ক্ষুধার্ত ফাংগাস, তাদের গবেষণাকে নিয়ে গেল অন্যদিকে৷ এগুলি আরো কিছু বিজ্ঞানী কাজ করে সাফল্য পেয়েছেন। এডিনবারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি ই- কোলাই নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার ল্যাবরেটারিতে তৈরি সংস্করণ ব্যবহার করেছেন। টেরেপ থ্যালিক অ্যাসিডকে ভেঙে ভ্যানিলিন তৈরিব কাজে যা খাবারের সুগন্ধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়৷ এই টেরেপথ্যালিক অ্যাসিড হচ্ছে পি ই টি থেকে পাওয়া একটি অণু৷ এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অফ বায়োলজিক্যাল সাইন্স এর ড: জোয়ানা স্যান্ডলার বলেছেন - "আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনো প্রাথমিক স্তরে৷ এই প্রক্রিয়াটিকে আরো কার্যকর ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক করার জন্য আরো কাজ করতে হবে৷
মহামারীকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে উপচে ভিড় দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে!
অন্যদিকে জার্মানির লাইপজিগে হেলমহোন্টৎস সেন্টার ফর এনভারমেন্টাল রিসার্চ-এর একটি দল আরেকটি গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটিয়েছে৷ এই দলটি সিউডোমোনাস এস পি টি ডি এ-ওয়ান নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াকে পলিইউরিথেন ভাঙার জন্য ব্যবহার করেছে৷ -স্থানীয় একটি আবর্জনা ফেলার জায়গায় এই ব্যাকটিরিয়াটি পাওয়া গিয়েছিল৷ দেখা গেছিল ব্যাকটিরিয়া প্লাস্টিকের কিছু অংশ খেয়ে ফেলেছে , আর বাকি অংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড হিসাবে বাতাসে মিশে যাচ্ছে৷ সিউডোমোনাস - তার এনজাইম ব্যবহার করে পলিইউরিথেনকে ভেঙে ফেলে৷ এছাড়া অন্য আরো কিছু ক্ষুদ্র অনুজীব আছে যারা প্লাস্টিক খায়৷ লাইপোজিগের, গবেষক দলটি এই ব্যাকটেরিয়ার জিনোম বিশ্লেষণ করেছে৷ যাতে এইসব এনজাইমের জেনেটিক গঠন বের করা যায়৷
যদি প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে যায় , তাহলে আগামী দিনে সজীব এর বাসস্থান পৃথিবীতেই সম্ভব হবে৷ প্লাস্টিক ছিল মানব সভ্যতার দিশারী , আজ সেই প্লাস্টিকের হাত ধরেই সভ্যতা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ।সেই সন্ধিক্ষণে প্লাস্টিক থেকো ছত্রাক আবিষ্কার নতুন দিগন্ত উন্মোচনের উৎস বৈকি৷