বিশেষ রচনা
আমেরিকার নার্ডিক সাদা চামড়ার মানুষেরা নাকি সর্বশ্রেষ্ঠ !
১৯২৬ সালে আমেরিকার ইউজেনিক্স সোসাইটি তৈরি হয়েছিল ৷ তারা বিশ্বাস করতেন সাদা চামড়ার মানুষেরা অনেক উঁচুমানের এবং তার মধ্যে নর্ভিক সাদা চামড়ার মানুষ এরা সর্বশ্রেষ্ঠ ইত্যাদি ৷কে উঁচুমানের এই চুলচেরা বিচার শুরু হয়ে গেল৷ কেউই ভেবে দেখার কথা ভাবেননি বিকাশ লাভের জন্য৷ আর্থ-সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ভৌগলিক দিক থেকে একই ভিন্ন যে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে তুলনা করা অর্থহীন। তখনকার বিজ্ঞান অন্যায় ভাবে আবার আবার সমর্থন জুগিয়েছিল সমাজের নিম্ন বর্গীয় মানুষদের মধ্যে কম বুদ্ধি ও অপরাধ প্রবণতার বিষয়টি৷
কৌতিনিয়ো : ভাবতেও পারিনি আবার খেলতে পারব
১৯০০ সাল নাগাদ ফরাসি মনোবিজ্ঞানী আলফ্রেড বিনে বুদ্ধাংক মাপার কাজ শুরু করলেন৷ যাদের মানসিক বয়স ১২ বা তার নিচে তারা সকলেই কম বুদ্ধি বা মোরণ এবং তাদের অপরাধী হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি৷ এ' ভাবে পরীক্ষা করে দেখা গেল বহু সংখ্যক মানুষ ক্রীতদাস বংশোদ্ভূত বা বস্তিতে বা গ্রামে বাস করে৷ যারা অপরাধের সঙ্গে বেশি করে জড়িয়ে পড়ে তাদের মানসিক বয়স ১২ বা তার নিচেয়৷ বংশতালিকা করে তাদের গোষ্ঠীর বিচার হলো, দেখা গেল এক বিরাট সংখ্যক মানুষ যারা, নিজেদের দেশ ছেড়ে আমেরিকায় এসেছেন তারা খারাপ গোষ্ঠীর মানুষ ত্রুটি পূর্ণ বংশগতির মানুষ বলে চিহ্নিত। খুবই পরিতাপের বিষয় তখনকার আমেরিকায় এক গরিষ্ঠ সংখ্যক বুদ্ধিজীবী মানুষ এই চূড়ান্ত জাতিবিরোধী চিন্তা ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন৷
ভারতের মোকাবেলা করতেই তালেবানদের জন্ম দিয়েছিল পাকিস্তান- সাবেক আফগান দূত
১৯০৫ সাল নাগাদ এর
প্রভাব পড়ল ভিনদেশীয় মানুষের
উপর৷ ইমিগ্রেশন আইন
কানুন বদলাতে শুরু করল ১৯২৪
সাল থেকে৷ এর প্রধান
উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকায় বসবাসকারীদের
কোন সালে কোন সাল
পর্যন্ত আদিবাসিন্দাদের মধ্যে ফেলা যাবে,
প্রতি বছর কতজন মানুষকে
আমেরিকায় বসবাসের অনুমতি দেয়া হবে৷ এই সব বিষয়ে৷ কোন পিছিয়ে পড়া
জাতি আমেরিকায় এসে যেন কোনভাবেই
প্রাধান্য বিস্তার করতে না পারে৷ যদিও এর কোন
বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা নেই-- পরবর্তীকালে তা
প্রমাণিত হয়৷ পূর্বের
ধারণা অনুযায়ী দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার
আজও চলছে দেশে দেশে৷
দুই একটি উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে ,আমেরিকান ফার্গুসন নামের কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকায় আঠারো বছরের কৃষ্ণাঙ্গ মাইকেল ব্রাউনকে হত্যার জন্য শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসনের বিরুদ্ধে মিসৌরি কোর্টে কোন চার্জই আনন্ না৷ উইলসন বেকসুর খালাস৷ প্রতি সপ্তাহে দুজন কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে মার খাচ্ছে৷ পুলিশি বর্বরতা ৯৯ শতাংশরই কোনো তদন্ত হয় না৷ ভারতীয় পরিবারে বা সোসাইটিতে ফার্গুসন ট্রেন্ডন মার্কিন সম্পর্কিত আলোচনায় পুলিশি অত্যাচার, বর্বরতা বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কোনো নিরপেক্ষ বা সহানুভূতি মুলক কথাবার্তা শোনা যায় না৷ নোম চমস্কি এক কথোপকথনে বলেছেন ,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে কলঙ্কিত অধ্যায় শুরু হয়েছিল লক্ষ লক্ষ নেটিভ ইন্ডিয়ানদের নির্বংশ করে দিতে, তারই পরের অধ্যায় কৃষ্ণাঙ্গদের উপর দুশো বছরের চরম নির্যাতন৷ অর্ধশতক আগে সিভিল রাইটস অ্যাক্ট পাস হয়েছে।
১৯৬৪ সালের এই আইনের পর ইমিগ্রন্ট পাস হয়৷ তবু এখনো কালোদের ওপর পুলিশি বর্বরতায়, গরিব অধিবাসীদের উপর সরকারি নিপীড়নে, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি চলছে৷ এই মুহূর্তে আমেরিকায় দশ লক্ষ কালো মানুষ জেলে বন্দী ,অনেকেরই বিনাবিচারে সিভিল রাইটস নেতা জে,সি জ্যাকসন বলেছেন এ দেশে যত কালো ছেলে মেয়ে কলেজে পড়ার সুযোগ পায় তার চেয়ে বেশি জেলবন্দি থাকে৷ মানুষ জাতির ভবিষ্যৎ বিকাশের স্বার্থে মার্কিন অভিযাতরা মনে করতেন সমাজের দরিদ্র ,অল্পবুদ্ধি , অপরাধ প্রবণতা, যৌনকর্ম , অসৎচরিত্র, ভবঘুরে বৃত্তি সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক৷ ইউজেনিক্স সূত্র প্রয়োগ করে এই ধরনের মানুষের সন্তান উৎপাদন বন্ধ করে দিতে পারলে সমাজকে কলুষমুক্ত করা যাবে৷